শুধু খরচ–দক্ষতা নয়, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় জরুরি: বিজিএমইএ

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের বিশাল অংশ দখল করে আছে বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশের তৈরি পোশাক। বাজারের এই অবস্থান সম্পর্কে তদন্ত করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশন (ইউএসআইটিসি) বাংলাদেশের নানা পক্ষের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন সংগঠন বিজিএমইএ তাদের জবাবে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানির প্রতিযোগিতার সক্ষমতা দেখতে হলে শুধু খরচ ও দক্ষতা নয়, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।

গত ২০ ডিসেম্বর মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) অনুরোধে বাংলাদেশসহ পাঁচ দেশের বিষয়ে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে ইউএসআইটিসি। বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান কীভাবে মার্কিন পোশাকশিল্পের বাজারে এত বড় অংশ দখল করে রেখেছে, তা তদন্ত করে দেখবে ইউএসআইটিসি। তালিকায় থাকা পাঁচ দেশ অসুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাজার দখল করছে কি না, সেটা খুঁজে বের করাই কমিশনের লক্ষ্য।

ইউএসআইটিসির ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে, ৭ মার্চ থেকে এ শুনানি শুরু হয়েছে। আর বাংলাদেশের বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে আগামী সোমবার। এ শুনানিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিজিএমইএ মৌখিকভাবে ও লিখিতভাবে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া শুনানির পরও ২২ মার্চ পর্যন্ত লিখিত বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ থাকবে। আর আগামী ৩০ আগস্ট কমিশন তাদের তদন্ত প্রতিবেদন বাণিজ্য প্রতিনিধির কাছে হস্তান্তর করবে।

ইউএসআইটিসির কাছে পাঠানো জবাবে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি লিড সনদপ্রাপ্ত পরিবেশবান্ধব কারখানা রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ২০৯টি লিড সনদপ্রাপ্ত কারখানা রয়েছে। এ ছাড়া আরও ৫০০ কারখানার লিড সনদ গ্রহণ প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। এ কারখানাগুলোতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এগুলোর কর্মপরিবেশ নিরাপদ। আর এ কারণে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে নিরাপদ পোশাক উৎপাদক দেশ।

বিজিএমইএ জানিয়েছে, সম্প্রতি বাংলাদেশে উৎপাদন খরচ অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। বিদ্যুতের দাম ২৫ শতাংশ, গ্যাসের দাম ২৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং জ্বালানি তেলের মূল্য ৬৮ শতাংশ বেড়েছে। এসব মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পরিবহন খরচও বেড়েছে। ২০২৩ সালের জুলাই মাস থেকে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়িয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর সার্বিক চার্জ, সিটি করপোরেশনের চার্জ, বিভিন্ন নিবন্ধনের মূল্যও বেড়েছে। ফলে উৎপাদনের সার্বিক খরচও বেড়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানির প্রতিযোগিতার সক্ষমতা দেখতে হলে শুধু খরচ ও দক্ষতা নয়, সামগ্রিক পরিস্থিতিও বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল ঢাকা সফর করে। ওই সফরের সময় তারা বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতির উন্নতির ওপর জোর দেয়। তারা বিশেষ করে শ্রমিকদের সমাবেশ এবং ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রক্রিয়ার আইন সংশোধন নিয়ে সরকারের সঙ্গে মুক্ত আলোচনার মতো বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং সেগুলো সরকারের সঙ্গে আলোচনায় তুলে ধরেছিল।

গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, বিশ্বজুড়ে যারা শ্রমিক অধিকার হরণ করবে, শ্রমিকদের ভয়ভীতি দেখাবে এবং আক্রমণ করবে, তাদের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞাসহ নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেবে যুক্তরাষ্ট্র। আর এ নীতি ঘোষণার পর দেশটিতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা করে বাংলাদেশ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠিও দিয়েছে।

এ বিষয়গুলোতে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে যে এ তদন্ত যদি বস্তুনিষ্ঠ ভিত্তিতে করা হয়, সেটি তারা করতেই পারে। এ তদন্তে যাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য না থাকে, সেটি প্রত্যাশা করে ঢাকা। শুনানিতে বাংলাদেশ তার অবস্থান তুলে ধরবে। আর যদি প্রতিযোগিতাবিরোধী কিছু তদন্তে উঠে আসে, তাহলে তা আমলে নেবে বাংলাদেশ।