শিল্পাচার্যের স্মরণে শেষ হলো জয়নুল মেলা

বায়োস্কোপে চোখ রাখতে ভিড় করে আছে কয়েকটি শিশু। পাশেই হাত নাড়িয়ে বাজনা বাজাচ্ছেন এক মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি। সুর করে গেয়ে চলেছেন, ‘কি চমৎকার দেখা গেলো.........’।
২০১৭ সালের শিশু কিশোররা হয়তো এই দৃশ্যটি কল্পনাও করতে পারবে না। এখনকার শিশু-কিশোরদের বেশিরভাগের কাছেই বায়োস্কোপ একটি অচেনা বস্তু। তবে নতুন প্রজন্মের শিশুদের মজার এই বায়োস্কোপ দেখার সুযোগ করে দিয়েছে জয়নুল মেলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এই মেলা শেষ হয়ে গেলো আজ রোববার।
প্রতি বছরের মতো এ বছরও বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো তিনদিনব্যাপী জয়নুল উৎসব। শেষ দিনে ছিল নানা আয়োজন। উৎসবে চারুকলা অনুষদের আটটি বিভাগের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের তৈরি শিল্পকর্মগুলো প্রদর্শিত হয়। এছাড়াও ছিল নানান ঐতিহ্যবাহী উপকরণ।
এর মধ্যে ছিল বায়োস্কোপ, নকশীকাঁথা, হাতে তৈরি ঘর সাজানোর নানা উপকরণ, তামার বা কাসার তৈরি নানা উপকরণ, ছিলো চিত্রকর্ম। কেউ বা মেলায় বসেই আঁকছিলেন ছবি। এছাড়া হাতে তৈরি নানা রঙয়ের ফুল, পাখি, হাতের কাজ করা পোশাক, মাটির খেলনা আর ভাস্কর্য তো ছিলোই।
আজ মেলার শেষ দিনে কথা হয় অনুষদটির সিরামিক বিভাগের শিক্ষক রবিউল ইসলামের সঙ্গে। জয়নুম মেলা সম্পর্কে এনটিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘জয়নুল মেলার প্রথাটুকু আমরা শান্তি নিকেতন থেকে নিই। শান্তি নিকেতনে শিল্পী নন্দলাল বসুর স্মরণে নন্দন মেলার আয়োজন করা হয়। নন্দন মেলা ২ দিন ব্যাপী করা হয়। আমরাও প্রথমে ২ দিন ব্যাপী করতাম। এখন মানুষের চাওয়া অনুযায়ী মেলাকে ৩ দিনে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে আজকে থার্টি ফার্স্টে নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে মেলা তাড়াতাড়ি শেষ করে দেওয়া হবে।’
জয়নুল মেলাকে দেশের অন্যান্য শিল্পীদের জন্যে উন্মুক্ত রাখা হবে কি না বা তাঁদেরকে মেলায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে এই শিক্ষক বলেন বলেন, ‘ জয়নুল মেলা সম্পুর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক অনুষ্ঠান। এটাকে আমরা বাণিজ্যিক করে তুলতে চাই না। এটা শুধুমাত্র এই অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্যেই। তবে প্রাতিষ্ঠানিক আর ঐতিহ্যবাহী শিল্পীদের সম্মিলন ঘটাতে, আমরা অন্যান্য মেলাগুলোতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিল্পীদের স্টল করার সুযোগ করে দিই। তাদের কাছ থেকে কোনো স্টল ভাড়া নেওয়া হয় না। তাদের খাবার দাবারের ব্যবস্থা আমরাই করি।’
ভবিষ্যতে মেলার সময় আরো বাড়ানো হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে রবিউল ইসলাম বলেন, একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সাতদিন ব্যাপী অনুষ্ঠান করা সম্ভব নয়।
গত শুক্রবার মেলার উদ্বোধনী দিনে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এপর উদ্বোধন সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মেলার আনুষ্ঠানিকতা।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, শিল্পী মোস্তফা মনোয়ার, কার্টুনিস্ট রফিকুন নবী (রনবী) সহ অন্যরা। অনুষ্ঠানের প্রথম দিন পটের গান, আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।